শিরোনাম দেখে অনেকেই হয়তো আগ্রহী হবেন জানতে লেখাটি কি নিয়ে। শিরোনামটি আমার নয়। এটি ২০০৪ সালে নির্মিত অস্কার বিজয়ী একটি প্রামান্য চিত্র। কোলকাতার কুখ্যাত রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট সোনাগাছিতে বেড়ে উঠা শিশুদের উপর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি দেখবার সুযোগ হয়েছিল গতকাল। অনেক দৃশ্যেই চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।
অনবদ্য এই প্রামান্য চিত্রটি তুলে ধরেছে নিষিদ্ধ জগতের বাসিন্দা এমন কিছু শিশুকে, যাদের জীবনের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে যায় তাদের জন্ম নেয়া সেই অপরাধ জগতের কষাঘাতে। নিজের শৈশবের কথা বারবার মনে পড়ে গেছে কচি, মানিক, সুচিত্রা, অভিজিৎ, পূজার জীবন কাহিনী দেখতে গিয়ে। মনে হয়েছে আমিও তো জন্মাতে পারতাম একজন সুচিত্রা হয়ে, আর তাহলে পরিচয়হীন শিশু হয়ে সবার কাছ থেকে ঘৃণা কুড়োতে কুড়োতে হয়তো পার করতাম এক জীবন। কিন্তু হায়, এই ঘৃণার পিছনের কাহিনী কয়জন খুঁজে বের করবার চেষ্টা করে? তারাতো খিস্তি করেই সারা।
আমেরিকান আলোকচিত্রী জেনা ব্রিস্কি একদল শিশুকে আগ্রহী করে তুলে ফটোগ্রাফীতে। একটা সময় এইসব শিশুদের আলোকচিত্রের প্রদর্শনী হয় নিউ ইয়র্ক এবং কোলকাতায়। শিশুগুলো চলে আসে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে। এরই মাঝে অভিজিৎ সুযোগ পেয়ে যায় এমস্টারডামে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর প্রদর্শনীতে অংশ নেবার। সারা পৃথিবী থেকে ডাক পায় মাত্র ৯টি শিশু, অভিজিৎ তাদের একজন। এই দৃশ্যটিতে চোখের পানি আটকে রাখা কঠিন মনে হয়েছে আমার কাছে।
কিন্তু সমস্যা হয় অভিজিৎ এর পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে। রেড লাইট ডিস্টিক্টের শিশু বলে কোলকাতা পাসপোর্ট অফিস অস্বিকৃতি জানায় অভিজিৎকে পাসপোর্ট দিতে। আলোকচিত্রী জেনা ব্রিস্কির অদম্য চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত পাসপোর্ট পায় অভিজিৎ। অঝোরে কেঁদেছি অভিজিৎ এর প্লেনে উঠার দৃশ্যটি দেখে।
প্রামান্য চিত্রটিতে উঠে এসেছে এইসব শিশুদের অধিকারের প্রশ্ন, তাদেরকে সমাজের বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতি না দেবার একটি সাধারণ মানসিকতা। জেনা ব্রিস্কির চেষ্টায় চারটি মেয়ে শিশুর বোর্ডিং স্কুলে পড়বার সুযোগ হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় একজন ছাড়া বাকিরা চলে আসে সেই স্কুল থেকে। একজন পালিয়ে আসে। আর একজনকে তার মা ছাড়িয়ে নেয় স্কুল থেকে। বাকি শিশুদের মধ্যে অনেকের পরিবার জানায় যে তারা চায়না তাদের সন্তানেরা বোর্ডিং স্কুলে যাক, সোনাগাছির বাইরে পা রাখুক। যে বেড়ি পায়ে দিয়ে এসব শিশুরা জন্মায়, সে বেড়ি শত আঘাতেও হয়না চূর্ণ। পেছনে রয়ে যায় শুধু ভাঙ্গা স্বপ্ন আর শিশু হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস।
৬ বছর আগে নির্মিত এই প্রামান্য চিত্রটি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, আজ কোথায় কেমন আছে সেই কচি, সুচিত্রা, পূজা বা অভিজিৎ। ছবিটি নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে লুকোনো ক্যামেরাতে দৃশ্য ধারণের জন্য। কিন্তু একজন দর্শক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, জেনা ব্রিস্কি এবং রস্ কফম্যান পরিচালিত বর্ন ইন্টু ব্রথেলস একটি অনবদ্য প্রামান্য চিত্র। দ্বিমত থাকতেই পারে।
যারা নেটফ্লিক্সের গ্রাহক তারা সহজেই অনলাইনে দেখতে পারবেন প্রামান্য চিত্রটি। ইউটিউবেও আছে চলচ্চিত্রটি।
Comments