বসন্তের জন্য অপেক্ষা

Image
  প্রিয় ঋতু কি কেউ জিজ্ঞেস করলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বো। কোনটা প্রিয় ঋতু? সবগুলোই যে প্রিয়! আমার বর্তমান ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য ডেলওয়্যার।এই ডেলওয়্যারে প্রতিটা মৌসুম ভিন্নতা নিয়ে আসে। যেহেতু এখানে প্রতিটা ঋতুর একটা   স্বতন্ত্র অস্তিত্ব  আছে তাই তাদের প্রতি আমার পৃথক পৃথক ভালোবাসা জন্মে গেছে। প্রতিটা ঋতুই নিয়ে আসে অনন্য আমেজ, প্রকৃতি সাজে অনুপম সাজে। সেই সাজ  যেন অন্য ঋতুগুলোর চেয়ে একেবারে ভিন্ন। এই যেমন এখন গুটিগুটি পায়ে এসেছে ঋতুরানী বসন্ত: আকাশে-বাতাসে ঝঙ্কৃত হচ্ছে তার আগমনী সুর, আমি সেই সুর শুনতে পাই।  সবগুলো ঋতু প্রিয় হলেও নিজেকে শীতকালের বড় ভক্ত বলে দাবী করতে পারিনা। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, তার পক্ষে ঠান্ডা আবহাওয়াতে মানিয়ে নেওয়া কার্যত কষ্টকর, বিশেষত সেই শীতকাল যদি চার-পাঁচ মাস স্থায়ী হয়। তাই শীতকাল বিদায় নিয়ে যখন বসন্তকাল আবির্ভূত হয় তখন এক একদিন জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবি, "এত্ত সুন্দর একটা দিন দেখার সৌভাগ্য হলো আমার!" শোবার ঘরের জানলা দিয়ে প্রভাতের বাসন্তী রঙের রোদ এসে ভাসিয়ে দেয় কাঠের মেঝে, সাদা আরামকে

চীনা বান্ধবী এবং প্রফেসর

দেশে থাকতে চীন দেশের মানুষের সংস্পর্শে তেমন একটা আসিনি। মানে আগে তো আমাদের দেশের বিউটি পার্লারগুলো চীনা বংশদ্ভুত পরিবারগুলোই চালাতো। ছোটবেলায় যখন ধানমন্ডির মে ফেয়ার অথবা হংকং বিউটি পার্লারে যেতাম চুল কাটাতে তখন চীনা মহিলাদের দেখেছি। তাদের বাংলাতে একটা অন্যরকম টান থাকলেও, তাদের কথা বুঝতে কখনও অসুবিধে হয়নি। চেয়ার বললে চেয়ারই বুঝতাম, অন্য কিছু নয়। 

একবার এক লেখার কাজে এমন এক চীনা বংশদ্ভুত পরিবারের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। ঢাকার ধানমন্ডিতে একসময় অবস্থিত হংকং চাইনিজ রেস্টোরান্ট এবং বিউটি পার্লার ছিল তাদের মালিকানাধীন। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে দেখি এক চীনা ভদ্রলোক আমাদের দেশীয় লুঙ্গী পড়ে খুব নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট টানছেন। জানিনা আমাদের ভড়কে দেয়ার জন্যই কিনা। যাই হোক, পরিবারটির সাথে কথা বললাম, তাদের ব্যবসা, কি করে এই দেশে এলেন এসব সব জানলাম। তারা পুরোনো কিছু পারিবারিক ছবিও দেখালেন। বুঝলাম যে চেহারা, গায়ের রং আর আকারেই শুধু তারা চৈনিক, মনে-প্রাণে তারা নিজেদের বাংলাদেশীই ভাবে। অতএব, বাংলাদেশে সত্যিকারের চীন দেশের মানুষের সান্নিধ্যে আমি কখনই আসিনি। 

দেশের বাইরে এসে প্রথম তাদের দেখলাম। একদম ১০০ ভাগ খাঁটি চীন দেশের মানুষ, যাদের কথার ৮০ ভাগই আমি বুঝিনা, ২০ ভাগ টেনেটুনে কোনো রকমে। কপাল এমন যে যেই প্রফেসরের সাথে কাজ করবো তিনিও চাইনিজ। প্রথম প্রথম এতো অসুবিধে হতো। ওনার এক ক্লাস লেকচারে উনি বারবার বলছিলেন Effective, আর আমি বারবার শুনছিলাম Negative! একেবারে ভিন্ন অর্থ দু'টি শব্দের। লেকচারের মানেই বদলে গিয়েছিল! মানুষ পারেনা এমন জিনিষ কম আছে, কারণ কিছু মাস পর আমি ওনার "চৈনিক ইংরেজি" বুঝতে শুরু করলাম। 

প্রবাসে এসে খুব বেশি বন্ধু হয়নি আমার। হাতেগোনা যে ক'জন বন্ধু হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম চেন। চায়নাতে প্রচুর মানুষের নাম নাকি চেন। চেনের ইংরেজি আমার প্রফেসরের চাইতেও ভয়াবহ। ও কি বলে আমি কিছুই বুঝিনা, মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় অনুরোধ করি যেন কাগজে লিখে দেয় ওর বক্তব্য। সদ্য চীন থেকে আসা চেন এর ইংরেজি শুধু আমি নই, অন্যরাও বুঝতে পারে না। কিন্তু কিভাবে কিভাবে এই মেয়েটিই আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী হয়ে উঠেছিল প্রবাসে। ক্লাসের পর অথবা বন্ধের দিনগুলোতে কেনাকাটা করা, বাইরে খাওয়া, বাজার করা সবই চলতো চেনের সাথে। চেনের ইংরেজি সময়ের সাথে সাথে অনেক ভাল হয়ে উঠেছিল। নির্ভুল ইংরেজি লিখতো চেন, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিল সে। যতসব সমস্যা হত ইংরেজি বলবার সময়। 

কিছু মাস আগে হঠাৎ ডাকে একটি খাম এসে হাজির। খুলে দেখি চেনের পাঠানো একটি মজার কার্ড। পড়ালেখার পাট চুকে গেছে বহু আগে কিন্তু বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি - চোখের আড়াল হলেও মানুষ হয়তো সবসময় মনের আড়াল হয়না। :)

Link to Bengali blog

Comments

Popular posts from this blog

A personal journey through the captivating landscape of Bengali literature

বসন্তের জন্য অপেক্ষা

রমজান - স্বদেশে বনাম প্রবাসে