বসন্তের জন্য অপেক্ষা

Image
  প্রিয় ঋতু কি কেউ জিজ্ঞেস করলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বো। কোনটা প্রিয় ঋতু? সবগুলোই যে প্রিয়! আমার বর্তমান ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য ডেলওয়্যার।এই ডেলওয়্যারে প্রতিটা মৌসুম ভিন্নতা নিয়ে আসে। যেহেতু এখানে প্রতিটা ঋতুর একটা   স্বতন্ত্র অস্তিত্ব  আছে তাই তাদের প্রতি আমার পৃথক পৃথক ভালোবাসা জন্মে গেছে। প্রতিটা ঋতুই নিয়ে আসে অনন্য আমেজ, প্রকৃতি সাজে অনুপম সাজে। সেই সাজ  যেন অন্য ঋতুগুলোর চেয়ে একেবারে ভিন্ন। এই যেমন এখন গুটিগুটি পায়ে এসেছে ঋতুরানী বসন্ত: আকাশে-বাতাসে ঝঙ্কৃত হচ্ছে তার আগমনী সুর, আমি সেই সুর শুনতে পাই।  সবগুলো ঋতু প্রিয় হলেও নিজেকে শীতকালের বড় ভক্ত বলে দাবী করতে পারিনা। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, তার পক্ষে ঠান্ডা আবহাওয়াতে মানিয়ে নেওয়া কার্যত কষ্টকর, বিশেষত সেই শীতকাল যদি চার-পাঁচ মাস স্থায়ী হয়। তাই শীতকাল বিদায় নিয়ে যখন বসন্তকাল আবির্ভূত হয় তখন এক একদিন জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবি, "এত্ত সুন্দর একটা দিন দেখার সৌভাগ্য হলো আমার!" শোবার ঘরের জানলা দিয়ে প্রভাতের বাসন্তী রঙের রোদ এসে ভাসিয়ে দেয় কাঠে...

ল্যান্ডলাইন ফোন

একটা সময় বাসায় “একটি” টেলিফোন থাকাই বিশাল ব্যাপার ছিল। মনে আছে বাসায় যখন প্রথম ল্যান্ডফোনের লাইন এসেছিল, সে কি উত্তেজনা! নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিককার কথা বলছি। এনালগ ফোনসেটগুলোতে তখন ছিল রোটারি ডায়াল। বেশিরভাগের বাড়িতেই সবুজ, কাল অথবা ঘিয়ে রঙের ফোনসেট দেখা যেত।
ফোনের সেই লাইন পেতে অবশ্য আমাদের অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আমাদের মতন দেশগুলোতে যা হয় আর কি। টেলিগ্রাফ এবং টেলিফোন বোর্ডের অতিপ্রিয় খাদ্য হচ্ছে ঘুষ। তারা আমাদের বাসায় একটি সবুজ রঙের ফোনসেট দিয়ে গেল কিন্তু লাইন দিল না। লাইন ঠিক সময়ে পাবার জন্য নাকি ঘুষ দিতে হবে। আব্বু কিছুতেই ঘুষ দিবে না, দুনিয়া উল্টে গেলেও না। ফলে আমাদের প্রায় এক বছর অপেক্ষা করতে হল একটি ফোনলাইন পাবার জন্য। এই এক বছর আমি আর ভাই প্রতিদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে ফোনসেট তুলে দেখতাম লাইন দিল কিনা! একদিন স্বপ্ন পূরণ হল – সেট তুলতেই দেখি পোঁ… শব্দ হচ্ছে।
এখন তো মানুষের হাতে হাতে ফোন। কারও কারও দু’হাতে দু’টো করেও ফোন দেখি! কিন্তু আগের মতন ফোনে “হ্যালো” বলবার আনন্দটা আর পাই না। এখন অনেক সময় মোবাইল ফোনটা বেজেই চলে কিন্তু ইচ্ছেও করেনা হাত বাড়িয়ে তুলি। বেশি থাকলে আর পেলে বুঝি এমনই হয়!
ছোটবেলায় ফোনে “হ্যালো” বলতে পারার সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা আনন্দ ছিল। নানুর বাসায় বেড়াতে গেলে আমার প্রিয় কাজ ছিল ফোন বাজলেই ছুটে যাওয়া। অদৃশ্য একজন মানুষের সাথে কথা বলবার একটা আলাদা আনন্দ ছিল তখন যেটি এই মুঠোফোনের যুগে আর পাইনা।

Comments

Popular posts from this blog

বসন্তের জন্য অপেক্ষা

A personal journey through the captivating landscape of Bengali literature

রমজান - স্বদেশে বনাম প্রবাসে